২০২৬ সালে ট্রেনের টিকিট কাটার নিয়ম অনলাইনে জানেন কী? ডিজিটাল বাংলাদেশের যাত্রায় রেলপথ এখন আপনার হাতের মুঠোয়। ট্রেনের টিকিট কাটার নিয়ম অনলাইনে ২০২৬ বছরে আগের চেয়ে আরও সহজ, দ্রুত ও নিরাপদ। রেলওয়ে স্টেশনের দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে কষ্টকর ভোগান্তির দিন শেষ। এখন আপনার স্মার্টফোন বা কম্পিউটারই হয়ে উঠতে পারে আপনার ব্যক্তিগত টিকিট কাউন্টার। এই আর্টিকেলে আজ আমরা বিস্তারিতভাবে জানবো কিভাবে অনলাইনে ট্রেনের টিকিট কাটার নিয়ম অনুসরণ করে মাত্র কয়েক মিনিটে সফলভাবে টিকিট বুকিং সম্পন্ন করা যায় ও কী কী কাগজপএ প্রয়োজন এবং কোন সময়সীমা মানতে হবে।
অনলাইনে ট্রেন টিকেট কাটার জন্য যা যা প্রয়োজন
ট্রেনের টিকিট কাটার নিয়ম অনলাইনে ২০২৬ সিস্টেমে প্রবেশ করতে কিছু প্রাথমিক প্রস্তুতি আবশ্যক। এই সেবা পেতে আপনার প্রয়োজন হবে মাএ কয়েকটি কাগজপত্র ও তথ্য। সঠিক তথ্য না থাকলে টিকিট বুকিং প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হতে পারে তাই নিম্নলিখিত তথ্য ও কাগজপএ আপনার সাথে আগে থেকেই প্রস্তুত রাখুন:
- জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি): আপনার ১৭-অঙ্কের এনআইডি নম্বর বা স্মার্ট এনআইডি কার্ডটি হাতের কাছে রাখুন।
- সঠিক জন্মতারিখ: এনআইডি কার্ডে উল্লিখিত জন্মতারিখটি সঠিকভাবে মনে রাখুন। রেজিস্ট্রেশনে এর প্রয়োজন পড়বে।
- সক্রিয় মোবাইল নম্বর: একটি সচল মোবাইল নম্বর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই নম্বরেই ভেরিফিকেশন কোড (OTP) ও গুরুত্বপূর্ণ বার্তা পাবেন।
- কার্যকর ইমেইল ঠিকানা: আপনার ই-টিকিটের কপি ও যেকোনো আপডেট এই ইমেইলেই পাঠানো হবে। জিমেইল, ইয়াহু বা যেকোনো সার্ভিস ব্যবহার করতে পারেন।
- ইন্টারনেট সংযোগ: একটি নির্ভরযোগ্য ইন্টারনেট সংযোগ, হতে পারে মোবাইল ডেটা বা ওয়াই-ফাই।
- ডেবিট/ক্রেডিট কার্ড বা মোবাইল ফিন্যান্স সার্ভিস: টিকিটের মূল্য পরিশোধের জন্য বিকাশ, নগদ, রকেট অথবা ব্যাংক কার্ড প্রস্তুত রাখুন।
প্রস্তুতির এই ধাপটি সম্পন্ন হলে এবার আসুন ট্রেনের টিকিট কাটার নিয়ম অনলাইনে ২০২৬ এর বিস্তারিত ধাপগুলো জেনে নেওয়া যাক।
ট্রেনের টিকিট কাটার নিয়ম অনলাইনে ২০২৬
বাংলাদেশ রেলওয়ের অফিসিয়াল পোর্টালের মাধ্যমে অনলাইনে ট্রেনের টিকিট কাটার নিয়ম খুবই সোজা ও ব্যবহারকারীবান্ধব। নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করে সহজেই টিকিট সংগ্রহ করুন।
ধাপ ১: ওয়েবসাইটে প্রবেশ করুন
প্রথমেই আপনাকে যেতে হবে বাংলাদেশ রেলওয়ের অফিসিয়াল ই-টিকিটিং ওয়েবসাইট https://www.eticket.railway.gov.bd এ। অথবা, আপনার স্মার্টফোনের জন্য ‘রেল সেবা’ (Rail Sheba) অ্যাপটি গুগল প্লে স্টোর থেকে ডাউনলোড ও ইন্সটল করে নিন। সরাসরি ওয়েবসাইট বা অ্যাপ ব্যবহার করার ক্ষেত্রে কোন পার্থক্য নেই। শুধু অফিশিয়াল চ্যানেল ব্যবহার করেই টিকিট কাটতে হবে যাতে কোন প্রতারণার শিকার না হন।

ধাপ ২: নতুন অ্যাকাউন্ট তৈরিতে রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করুন
ওয়েবসাইট বা অ্যাপের হোমপেজে ‘রেজিস্ট্রেশন’ বা ‘Sign Up’ বাটনে ক্লিক করুন। একটি ফর্ম খুলে আসবে যেখানে আপনাকে নিম্নোক্ত তথ্যগুলো সঠিকভাবে প্রদান করতে হবে:
- আপনার সম্পূর্ণ নাম (ইংরেজিতে)।
- জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর (১৭ অঙ্ক)।
- জন্মতারিখ (DD/MM/YYYY ফরম্যাটে)।
- সক্রিয় মোবাইল নম্বর।
- একটি শক্তিশালী পাসওয়ার্ড।
- ইমেইল ঠিকানা
সব তথ্য সঠিকভাবে দিয়ে ‘রেজিস্টার’ বাটনে ক্লিক করুন।

ধাপ ৩: ওটিপি’র মাধ্যমে মোবাইল নম্বর যাচাই (ভেরিফিকেশন)
ট্রেনের টিকিট কাটার নিয়ম অনলাইনে ২০২৬ এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপগুলোর একটি হলো মোবাইল ভেরিফিকেশন। রেজিস্ট্রেশনের পরপরই আপনি যে মোবাইল নম্বর দিয়েছেন সেই নম্বরে একটি ৬-অঙ্কের ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড (OTP) এসএমএসের মাধ্যমে পাঠানো হবে। ৪৫ সেকেন্ডের মধ্যে সেটি নির্দিষ্ট ঘরে প্রবেশ করান। সঠিক হলে আপনার মোবাইল নম্বর ভেরিফাইড হবে ও অ্যাকাউন্ট সক্রিয় হয়ে যাবে। এরপর প্রথমবারের মতো আপনার অ্যাকাউন্টে লগ ইন করুন।

ধাপ ৪: কাঙ্ক্ষিত ট্রেন ও কেবিন নির্বাচন করুন
লগ ইন করার পর আপনাকে ‘টিকিট বুকিং’ বা ‘Buy Ticket’ অপশনে ক্লিক করতে হবে। তারপর নিচের তথ্য দিয়ে ট্রেন খুঁজে বের করুন:
- যাত্রার তারিখ।
- যাত্রা শুরুর স্টেশন (যেমন: ঢাকা কমলাপুর)।
- গন্তব্য স্টেশন (যেমন: চট্টগ্রাম)।
সার্চ দিলে ঐ দিনের সব ট্রেন, তাদের সময়, ভাড়া ও সিটের প্রাপ্যতা দেখাবে। আপনার পছন্দের ট্রেন বেছে নিন ও ক্লাস (শোভন, শোভন চেয়ার, এসি সিটার ইত্যাদি) সিলেক্ট করুন। এরপর ‘সিট ভিউ’ বা ‘View Seats’ অপশনে ক্লিক করে খালি সিটের মানচিত্র থেকে আপনার পছন্দের সিট (উইন্ডো বা আইল) নির্বাচন করুন।
ধাপ ৫: সাবধানে যাত্রীর বিস্তারিত তথ্য দিন
এই ধাপে আপনি যতজন যাত্রীর জন্য সিট বেছে নিয়েছেন তাদের প্রত্যেকের তথ্য পৃথকভাবে দিতে হবে। প্রতিটি যাত্রীর জন্য এই তথ্যগুলো প্রয়োজন:
- পূর্ণ নাম (ইংরেজিতে)।
- বয়স।
- লিঙ্গ।
- যাত্রীর ধরণ: এখানে বিশেষ মনোযোগ দিন। যদি যাত্রীর বয়স ৩ বছরের ঊর্ধ্বে কিন্তু ১২ বছরের নিচে হয়, তাহলে ‘Child’ সিলেক্ট করুন। এতে টিকিটের মূল্য অর্ধেক বা নির্দিষ্ট হারে কমে যাবে। ১২ বছরের ঊর্ধ্বে হলে ‘Adult’ সিলেক্ট করুন। সঠিক তথ্য না দিলে পরবর্তীতে ট্রেনে সমস্যা হতে পারে।
ধাপ ৬: নিরাপদ উপায়ে টিকিটের মূল্য পরিশোধ করুন
যাত্রীর তথ্য দেওয়ার পর আপনাকে একটি সারসংক্ষেপ পৃষ্ঠা দেখানো হবে। এখানে মোট ভাড়া, সার্ভিস চার্জ, ভ্যাট ইত্যাদি সহ মোট অর্থমূল্য দেখাবে। ট্রেনের টিকিট কাটার নিয়ম অনলাইনে ২০২৬ এর অধীনে আপনাকে নিম্নোক্ত যেকোনো একটি মাধ্যম নির্বাচন করে পেমেন্ট সম্পন্ন করতে হবে:
- মোবাইল ফিন্যান্স সার্ভিস: বিকাশ, নগদ, রকেট।
- ডেবিট/ক্রেডিট কার্ড: ভিসা, মাস্টারকার্ড বা স্থানীয় ব্যাংকগুলোর কার্ড।
- ইন্টারনেট ব্যাংকিং।
পেমেন্ট গেটওয়েতে রিডাইরেক্ট হয়ে নিরাপদে লেনদেন সম্পন্ন করুন। পেমেন্ট সফল হওয়ার আগ পর্যন্ত টিকিট বুকিং নিশ্চিত হবে না এটি মনে রাখা গুরুত্বূর্ণ।
ধাপ ৭: ই-টিকিট ডাউনলোড ও যাত্রার প্রস্তুতি
পেমেন্ট সফল হওয়ার সাথে সাথে একটি নিশ্চিতকরণ বার্তা আসবে ও আপনার ই-টিকিট তৈরি হয়ে যাবে। এই টিকিটটি আপনাকে অবশ্যই ডাউনলোড করে সংরক্ষণ করতে হবে। এটি পিডিএফ ফরমেটে আসবে যাতে একটি গুরুত্বপূর্ণ PNR (Passenger Name Record) নাম্বার থাকে। এছাড়াও, টিকিটের একটি কপি আপনাকে দেওয়া ইমেইলেও পাঠানো হবে। টিকিটটি ভালোভাবে প্রিন্ট করে রাখুন অথবা স্মার্টফোনে সেভ করে রাখুন। ট্রেনে যাত্রার সময় এই ই-টিকিটের প্রিন্টকপি বা সফটকপির পাশাপাশি আসল জাতীয় পরিচয়পত্র অবশ্যই সঙ্গে রাখতে হবে।
অনলাইনে ট্রেনের টিকিট কাটার সর্বোত্তম সময় ও সুযোগ
ট্রেনের টিকিট কাটার নিয়ম অনলাইনে ২০২৬ এ কোন নির্দিষ্ট সময়সীমা নেই। আপনি সপ্তাহের ৭ দিন, ২৪ ঘন্টাই টিকিট বুকিং করতে পারবেন। তবে অগ্রিম টিকিট কাটার সুযোগ সাধারণত যাত্রার তারিখের ৪ থেকে ৫ দিন আগে থেকে শুরু হয়। জনপ্রিয় রুট ও ঈদ, পূজার মতো উৎসবের সময় টিকিটের চাহিদা অনেক বেশি থাকে। সেক্ষেত্রে যাত্রার তারিখ নির্দিষ্ট হওয়ার সাথে সাথেই বা অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হওয়ার প্রথম দিনই টিকিট কেটে ফেলা বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
ট্রেনের টিকিট সংক্রান্ত ২০২৬ সালের নিয়মাবলী ও সতর্কতা
সেবা গ্রহণের আগে আপডেটেড নিয়মগুলো জেনে রাখা দরকার:
- সীমা: একজন ব্যবহারকারী একবারে সর্বোচ্চ ৪টি টিকিট ক্রয় করতে পারবেন।
- ব্যক্তিগতকরণ: যাত্রীর নামে ক্রয়কৃত টিকিট শুধুমাত্র সেই যাত্রীর জন্যই বৈধ। নাম হস্তান্তরযোগ্য নয়।
- অনুসন্ধান: যাত্রা শুরুর আগে eticket.railway.gov.bd সাইটের ‘Verify Ticket’ অপশনে আপনার PNR নম্বর ও মোবাইল দিয়ে টিকিটের বৈধতা যাচাই করে নিতে পারেন।
- প্রয়োজনীয় নথি: ট্রেনে উঠার সময় ই-টিকিটের হার্ডকপি বা সফটকপি এবং আসল জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) জমা দিতে হবে। ফটোকপি গ্রহণযোগ্য নয়।
মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে ট্রেন টিকিট বুকিং
‘রেল সেবা’ অ্যাপ বাংলাদেশ রেলওয়ের অফিসিয়াল অ্যাপ্লিকেশন। গুগল প্লে স্টোর থেকে এটি বিনামূল্যে ডাউনলোড করে নিন। অ্যাপটির ইন্টারফেস বেশ সহজ। উপরে বর্ণিত একই নিয়মে আপনি অ্যাপ থেকেই রেজিস্ট্রেশন করে পুরো টিকিট বুকিং প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারবেন। এটি মোবাইল ব্যবহারকারীদের জন্য অত্যন্ত সুবিধাজনক।
ট্রেনের টিকিট বুকিংয়ে বিকাশ ও অন্যান্য পেমেন্ট মাধ্যম
সরাসরি বিকাশ অ্যাপ থেকে টিকিট বুকিংয়ের অপশন এখনও চালু হয়নি। তবে রেলওয়ের ওয়েবসাইট বা অ্যাপ থেকে পেমেন্টের সময় আপনি পেমেন্ট গেটওয়ে হিসেবে বিকাশ, নগদ বা রকেট নির্বাচন করে সহজেই টাকা পরিশোধ করতে পারবেন। অর্থাৎ বিকাশ হলো একটি পেমেন্ট মাধ্যম বুকিং প্ল্যাটফর্ম নয়।
ট্রেনের টিকিট চেক, ফেরত ও বাতিল করার পদ্ধতি
- টিকিট চেক: PNR নাম্বার হলো আপনার টিকিটের প্রধান চাবি। রেলওয়ের ওয়েবসাইট বা অ্যাপের ‘Purchase History’ বা ‘Verify Ticket’ সেকশনে গিয়ে এই পিএনআর নাম্বার দিয়ে যেকোনো সময় টিকিটের অবস্থা, যাত্রীর নাম, ট্রেনের নাম ও সময় দেখতে পারবেন।
- টিকিট ফেরত/বাতিল: যেকোনো কারণে টিকিট বাতিল করতে চাইলে অবশ্যই যাত্রার শুরুর কমপক্ষে ২৪ ঘন্টা আগে অফিসিয়াল ওয়েবসাইট বা অ্যাপের মাধ্যমে বাতিলের আবেদন করতে হবে। টাকার একটি অংশ (সার্ভিস চার্জ কর্তনসহ) নির্দিষ্ট সময় পরে আপনার পেমেন্ট মাধ্যমেই ফেরত আসবে। ট্রেন ছেড়ে দেওয়ার পর টিকিট বাতিল করা যায় না।
আরও জানতে পারেনঃ সরকারি ছুটির তালিকা ২০২৬ ( আপডেট তথ্য )
শেষ কথা
আধুনিক প্রযুক্তির সুফল হিসেবে ট্রেনের টিকিট কাটার নিয়ম অনলাইনে ২০২৬ সত্যিই অসাধারণ সহজ ও সময়সাশ্রয়ী করে তোলা হয়েছে। এই আর্টিকেলে আমরা ধাপে ধাপে পুরো প্রক্রিয়াটি বোঝানোর চেষ্টা করেছি। শুধু প্রয়োজন সামান্য প্রস্তুতি, সতর্কতা এবং নির্দেশিকা অনুসরণ করা। আশা করি, এবার থেকে যেকোনো যাত্রার জন্য আপনার ট্রেন টিকিট বুকিং করা কোনো চিন্তার বিষয় থাকবে না। নিরাপদ ও আনন্দময় যাত্রা হোক আপনার। আর্টিকেলটি সম্পর্কে যদি আপনার কোন প্রশ্ন থেকে থাকে তাহলে আপনি এ নির্দ্বিধায় কমেন্ট করে আমাদের জানাতে পারেন আমরা আপনার সাথে দ্রুত যোগাযোগ করব।




